২৬শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত: সীমান্তে দ্বিতীয় দিনে গোলাগুলিতে নিহত ১৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দ্বিতীয় দিনের মতো গোলাগুলি চলেছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৫ জুলাই) ভোর থেকে উভয় পক্ষ ভারী কামান ও রকেট ছুড়েছে। দুই দেশের মধ্যে গত এক দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ। এতে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উবন রাতচাথানি ও সুরিন প্রদেশে কাম্বোডিয়ার সোবাহিনী রাশিয়ার তৈরি বিএম-২১ রকেট সিস্টেমসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪ জনই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন, এর মধ্যে ১৫ জন সেনা।
সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে থাইল্যান্ড অন্তত এক লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে। কম্বোডিয়ার তরফ থেকে এখনও বিস্তারিত কোনও তথ্য জানানো হয়নি। তবে ওডার মিনচি প্রদেশের প্রশাসনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের পক্ষের একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে, সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে।
রয়টার্সের সাংবাদিকরা থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। রাস্তাঘাটে থাই সেনাদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। এক ডজনের মতো ট্রাক, সাঁজোয়া যান ও ট্যাংক নিয়ে একটি থাই সামরিক বহর সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয় সংঘর্ষ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা ছয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই সীমান্ত অঞ্চলটি গত এক শতকের বেশি সময় ধরে দুদেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ।
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থাইল্যান্ড তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে ও কম্বোডিয়ার দূতকে বহিষ্কার করে। এরই মধ্যে থাইল্যান্ড ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। এর মধ্যে একটি ব্যবহার করে তারা একটি কম্বোডিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। কম্বোডিয়া এটিকে ‘দায়িত্বহীন ও নিষ্ঠুর আগ্রাসন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আঞ্চলিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জানিয়েছেন, তিনি দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের ইতিবাচক মনোভাব ও আলোচনার ইচ্ছাকে স্বাগত জানাই। প্রয়োজনে মালয়েশিয়া সহায়তা দিতে প্রস্তুত।অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, বেসামরিকদের সুরক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত বরাবর শত বছরের পুরোনো ভূখণ্ডগত বিরোধ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চল উত্তপ্ত হয়েছে। তবে এই মাত্রায় সংঘর্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়নি। উভয় দেশই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সদস্য। সংঘর্ষের ফলে আসিয়ানের একতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন