১লা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তারেক রহমান জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হননি: নাহিদ ইসলাম

অনলাইন ডেস্ক: অভ্যুত্থানের পর জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজি হননি বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ দাবি করেন।
একই পোস্টে তিনি আরও দাবি করেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।নাহিদ তার পোস্টে লেখেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাবনা ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয়নি, তারা অন্য মাধ্যমে এ প্রস্তাবনা পেয়েছিলেন— এই বক্তব্যটি সত্য নয়। ৫ আগস্ট রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে আমরা বলেছিলাম আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করতে চাই।
‘সেই প্রেস ব্রিফিং এর পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের ভার্চ্যুয়াল মিটিং হয়। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মত হননি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাজেশন দেন। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা বলি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে। ’
এনসিপি আহ্বায়ক লেখেন, ৭ আগস্ট ভোরবেলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় আমরা উনার সাথে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা করি। উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেওয়ার আগে তারেক রহমানের সঙ্গে আরেকটি মিটিংয়ে প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে আলোচনা/পর্যালোচনা হয়।
‘শিবির নেতা সাদিক কায়েম সম্প্রতি এক টকশোতে বলেছেন ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম— এটা মিথ্যাচার। গুরুবার আড্ডা— পাঠচক্রের সঙ্গে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সঙ্গে জাবির এক স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে।
‘আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সব পক্ষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহযোগিতা করা মানে এই না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। ’
‘সাদিক কায়েম বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিলেন না। কিন্তু ৫ আগস্ট থেকে এই পরিচয় তিনি ব্যবহার করেছেন। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কায়েমকে প্রেস ব্রিফিংয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কায়েমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম। ’
নাহিদ ইসলাম লেখেন, অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করেনি। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনেও হয়নি। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম। আর কারা ক্ষমতার ভাগ-বাঁটোয়ারা করতে চাইছে, গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে সে বিষয়ে অন্যদিন বলব।
‘২ আগস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশ্যে কথিত সেফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেট করা হয় যেন সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে, আর আমাদের সঙ্গে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। ’
‘আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভেতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটি এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে এগোতে হবে। ৫ আগস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি। ’
এনসিপির এই নেতা লেখেন, সায়ের গং ৫ আগস্টের পর বারবার চেষ্টা করেছে আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে। সেক্ষেত্রে সাদিক কায়েমদের ব্যবহার করেছে এবং তারা ব্যবহৃতও হয়েছে। সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভেইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নাই হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে এ দেশের ইতিহাসে এরকম কখনো হইয়েছে কি না, জানা নেই। কিন্তু মিথ্যার ওপর দিয়ে বেশিদিন টেকা যায় না। এরাও টিকবে না।

আরও পড়ুন