২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকার প্রাভা হেলথে ভুয়া করোনা রিপোর্ট: চট্টগ্রামে মামলায় সমন জারি

আদালত প্রতিবেদক: করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ঢাকার নামকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার। তিনি নিজেও এ প্রতারণার শিকার।
সোমবার (৩০ জুন) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক ইব্রাহিম খলিল মামলার শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।আসামিদের মধ্যে রয়েছেন — প্রাভা হেলথের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. সিমিন এম. আকতার, সিনিয়র পরিচালক ডা. জাহিদ হোসেইন, এবং জুনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার রেজোয়ান আল রিমন, যিনি করোনার ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করায় অভিযুক্ত।
মামলার বাদী আব্দুস সাত্তার বলেন, ২০২১ সালের ৭ মার্চ হার্ট অ্যাটাক করে আমি সিএসসিআর হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলাম। চারদিন থাকার পর ডাক্তার আমাকে এনজিওগ্রাম করতে বললেন। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এনজিওগ্রাম ঢাকায় করবো। আর হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে করোনা নেগেটিভ না হলে ভর্তি করাতো না। সেই সময়ে ইমার্জেন্সি আমার হার্টে রিং পরাতে হবে। সরকারি হাসপাতালে টেস্ট করালে রিপোর্ট পেতে সময় লাগবে। তাই অনলাইনে প্রাভা হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিজ্ঞাপন দেখে ২০ মার্চ তাদের কাছে গিয়ে করোনা টেস্ট করাই।
তিনি আরও বলেন, পরদিন ২১ তারিখ তারা আমাকে জানায় আমার করোনা পজিটিভ। কিন্তু আমাদের সন্দেহ হয়। কারণ একে তো হার্ট অ্যাটাক তার উপর করোনা, এখন তো নির্ঘাত মৃত্যু। আমার ছেলের বউ ডাক্তার। পরবর্তীতে আমরা আবার করোনা টেস্ট করাই। ঢাকার পরবর্তীতে এ এম জেড হাসপাতালে টেস্ট করলে রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে। এরপর দিন গিয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি হই। আমার হার্টে দুটা রিং পরানো হয়।
তিনি আরও বলেন, আমি হাসপাতালে (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন) ভর্তির একদিন পর প্রাভা হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আমাকে ফোন করে বললো, আপনার রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছে। এখন আমাদের একটা প্যাকেজ আছে এক লাখ টাকার; আপনি ভর্তি হবেন কিনা। তখন আমি তাদের বললাম যে আমার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল, আমার রিংও পরানো শেষ। কিন্তু আপনারা প্রতারণা করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছেন। আমি আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ায় প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার কথা জানিয়ে মামলার বাদী আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, পরে তারা ভুল স্বীকারও করে নেয়। আমি তাদেরকে একটা লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। কিন্তু আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। পরে জানলাম তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। ডাক্তার সাবরিনার মতো ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে প্যাকেজের আওতায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করে মানুষদের ঠকিয়েছে। তারা কেবল আমাকেই এমন ঠকিয়েছে তা কিন্তু নয়। আরও অসংখ্য মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে। যেহেতু তারা এতোদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় ছিল; তাই কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এ কারণে আজ (সোমবার) মামলা করলাম। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, কোভিড টেস্টের ভুল রিপোর্ট দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা এবং অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে এই মামলা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত তিন আসামির বিরুদ্ধেই সমন জারি করেছেন।

আরও পড়ুন