৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডা. ফাতেমা দোজাকে বরখাস্ত করল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

অনলাইন ডেস্ক: তথ্য গোপন, আমন্ত্রণপত্র জালিয়াতি ও ফৌজদারি মামলার তথ্য আড়ালসহ নানা অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওএসডি সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সোমবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সই করা প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) ও ৩(গ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও পলায়নের দায়ে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
ডা. ফাতেমা দোজা প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেননি এবং ব্যক্তিগত শুনানিও চাননি। পরে দ্বিতীয় নোটিশের জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক হয়নি। এ কারণে গুরুদণ্ডস্বরূপ চাকরিচ্যুতির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।ডা. ফাতেমা দোজাকে চূড়ান্ত বরখাস্তের সিদ্ধান্ত পরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) সম্মতি জানায় এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে এই প্রস্তাব অনুমোদন করেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৪(৩)(ঘ) মোতাবেক জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অভিযোগ বিবরণীতে দেখা যায়, সেখানে ডা. ফাতেমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ লাভ।
২. চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পরে আবার সহকারী অধ্যাপক হিসেবে হৃদরোগ হাসপাতালে যোগদান; চাকরিতে অনুপস্থিতকালের ছুটি মঞ্জুর না করানো।
৩. ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে উত্তর আমেরিকার রেডিওলজিক্যাল সোসাইটির সম্মেলনে আমন্ত্রণপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে সেখানে অংশগ্রহণ ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।
৪. স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রশাসন শাখা থেকে দুটি পৃথক কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলেও সেগুলোর জবাব না দেওয়া।
৫. মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত থাকাবস্থায় ফৌজদারি মামলায় হাজতবাস করলেও সে তথ্য লুকিয়ে চার মাস আটদিনের জন্য অর্জিত ছুটির আবেদন করা।
৬. এছাড়াও কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য গোপন করে স্বাভাবিক নিয়মে (প্রায় ১০ বছর) বেতন-ভাতা ও পদোন্নতিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা লাভের অভিযোগও উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে ডা. ফাতেমা দোজাকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে ফাতেমা দোজা ২০০৭ সালে রেডিওলোজিস্ট পদে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে যোগ দেন। এরপর ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি ওই বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকাবস্থায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেখানে যোগদানের জন্য তিনি ওই চাকরি থেকে অব্যাহতিও নেন।
কিন্তু এসব তথ্য গোপন করে ২০১৩ সালের ১০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে আবারও যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী, অব্যাহতি নেওয়ার পর পুনরায় সেই চাকরিতে বহাল থাকার নিয়ম নেই।

আরও পড়ুন