নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মহানগরে জিকা ভাইরাসের ঝুঁকি বাড়ছে। কয়েকদিন আগেই জানা গেছে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসের উপস্থিতির কথা। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সাম্প্রতিক সরেজমিন তদন্তে ওঠে এসেছে এ ভাইরাসের অস্তিত্বের ভয়াবহ চিত্র। আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীনের স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। প্রতিবেদনে একইসঙ্গে তিনটি সুপারিশ এবং চারটি পদেক্ষপ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস ইজিপ্টাই মশার আধিক্য চট্টগ্রামে জিকা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত বহন করছে। সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এটি ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো বৃহত্তর স্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিতে পারে।
জরিপ সংশ্লিষ্টদের তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯, ১৩, ১৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়টি এলাকা এবং আটটি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে জুলাই মাসে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর’র গবেষণা দল। রোগতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত ও সন্দেহজনক জিকা রোগীদের বাসা এবং আশপাশের ৫০০ মিটার ব্যাসার্ধের এলাকায় রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়।
কীটতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে ছয়টি এলাকা- চট্টেশ্বরী রোড, ও আর নিজাম রোড, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও ঝাউতলায় ১২৮টি বাড়ি পরিদর্শন করেন গবেষকরা। এরমধ্যে ৬২টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পান গবেষকদল। এতে ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ পাওয়া গেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ২০ শতাংশ ঝুঁকিসীমার তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। আইইডিসিআরের প্রতিবেদনে এই হারকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করে সতর্ক করে বলা হয়, এডিস মশার ঘনত্ব নগরীতে জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের বিস্তারকে মারাত্মক রূপ দিতে পারে।এছাড়া ৪৩ দশমিক ০৪ বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া যায়। যাকে পরিমাপের সূচক অর্থাৎ ‘হাউস ইনডেক্স’ বলা হয়। আর ৫১ দশমিক ০১ শতাংশ কনটেইনার বা পাত্রে পাওয়া যায় মশার লার্ভা। যাকে ‘কনটেইনার ইনডেক্স’ বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর ছয়টি এলাকা ও আট চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে গত এক সপ্তাহ ধরে পরিচালিত কীটতাত্ত্বিক জরিপে দেখা যায়, শহরের এডিস মশার মধ্যে ৬৫ শতাংশই জিকা বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির। যা প্রজননক্ষম এবং জিকা ভাইরাসের প্রধান বাহক হিসেবে পরিচিত। এটি জিকা ভাইরাস ছড়াতেও যথেষ্ট সক্ষম। শহরে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের উচ্চ শংকার ইঙ্গিত দেয় বলেও আইইডিসিআর এর পক্ষ থেকে বলা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ওয়ার্ড ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টেশ্বরী এলাকায় মশার সংখ্যা নির্ধারণের সূচক ছিল ৪৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ও আর নিজাম রোডে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ, আগ্রাবাদে ১৩৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, পাহাড়তলীতে ১১০ শতাংশ, হালিশহরে ৬৬দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং ঝাউতলায় ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এসব মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ঝুঁকিপূর্ণ সীমার অনেক বেশি। যা এসব এলাকায় মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, এমনটাই নির্দেশ করে। অন্যদিকে, মশার লার্ভা পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৬৫ শতাংশ ছিল এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশার লার্ভা, যা জিকা ভাইরাস বহনে বিশেষভাবে সক্ষম। আর ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশ ছিল এডিস আলবোপিকটাস প্রজাতির এবং ছোট অংশে উভয় প্রজাতির মিশ্র লার্ভাও পাওয়া গেছে। এডিস ইজিপ্টাই মশার আধিক্য এই এলাকায় জিকা ভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আইইডিসিআর’র পক্ষ থেকে সরেজমিনে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনটি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
