৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত

অনলাইন ডেস্ক: সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকারসহ জুলাই সনদের যে খসড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছে, তা ‘অসম্পূর্ণ’ এবং এর কিছু অংশ ‘বিপজ্জনক’ বলে মনে করছে জামায়াতে ইসলামী।দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “এটি অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। আজকে তারা বলছে এটা একটা নমুনা মাত্র, ভুল হয়েছে। যদি সেটাই না হয়, তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। তবে যদি সেটাই মূল কথা হয়, তাহলে একে গ্রহণ করা যাবে না।”মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের সংলাপের বিরতিতে তিনি এ কথা বলেন।জামায়াতে ইসলামী নিজেরই সনদের একটি খসড়া তৈরি করছে এবং সেটা তারা কমিশনে জমা দেবে জানিয়ে তাহের বলেন, “সংলাপে যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।”
যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য দুটি পথ প্রস্তাব করছে জামায়াতে ইসলামী।
১. অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত পার্লামেন্টে তা অনুমোদন।
২. গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া।
তাহের বলেন, “আমরা যে কোনো একটি পদ্ধতিতে এই কাঠামোকে আইনগত বৈধতা দিতে চাই।”তিনি বলেন, “আমরা ঐকমত্যের পক্ষে, কিন্তু সেটা হতে হবে কার্যকর এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে। অন্যথায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যেতে পারে।”আগের দিন সোমবার জুলাই জাতীয় সনদের ওই খসড়া আলোচনায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করে একমত্য কমিশন।যেসব সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য হচ্ছে, দুই বছরের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে।
খসড়ার ‘অঙ্গীকারনামায়’ সাতটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়াটি চূড়ান্ত হলে তাতে রাজনৈতিক দলের নেতা বা প্রতিনিধিদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সদস্যদের সই থাকবে।
এ খসড়ায় জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির পটভূমি, ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও কার্যক্রম তুলে ধরার পর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের আলোচনায় উঠে আসা প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।জামায়াতের মত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিও ওই খসড়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা এটির তীব্র বিরোধিতা করছি। আলোচনার পদ্ধতি নিয়েই আলোচনা হয়নি, অথচ তারা খসড়া প্রকাশ করেছে। এটা আমরা গ্রহণ করতে পারি না।”যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হচ্ছে, নির্বাচনের আগে একটি আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না পেলে এনসিপি জুলাই সনদ গ্রহণ করবে না বলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
পরে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান জানাতে এসে দলের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, চলমান সংলাপে ‘কেয়ারটেকার’ সরকারের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে।“আমরা একমত হয়েছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হতে হবে, এখানে প্রায় সবাই একমত, একমাত্র বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
“প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের), এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। এরা ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান নির্বাচন করবেন।“যদি একমত না হয়, তাহলে প্রথমে সর্বসম্মতভাবে, পরবর্তীতে র‌্যাংক চয়েস ভোটিং পদ্ধতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। এই পদ্ধতিতে ভোটার হবেন মোট সাতজন—উপরে উল্লিখিত পাঁচ সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের একজন করে বিচারপতি।”তাহের বলেন, “বিচারপতি দুজন যুক্ত করা হয়েছে যেন এককভাবে তৃতীয় দল বা অন্য কেউ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর না হয়ে যায়। আমরা আশা করি বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকবেন এবং হর্স ট্রেডিংয়ের আশঙ্কা কমবে।
“বিএনপির আপত্তি মূলত এই যে—যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ দল মনে করে, সংসদে পাঠালে তা আর সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে না।”তাহের বলেন, “সংসদে পাঁচ-ছয়টা দল আছে, অথচ এই বডিতে ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।”

আরও পড়ুন