১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী চরম উৎকণ্ঠার কারণ

সাইফুল ইসলাম সাইফ : জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে মানব স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। তাপদাহ, ঝড়, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় আঘাত, রোগ বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা বাড়ছে। এগুলো বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে অসমভাবে প্রভাবিত করছে যা গত পাঁচ দশকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রগতিকে বিপরীতে নেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করছে। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় সৃষ্ট কারণগুলোই এ অবস্থার জন্য দায়ী। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বাড়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতার বৈরী প্রভাব পড়ছে, অ্যাসিড বৃষ্টি, জীবজন্তু ধ্বংসসহ নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অপরিকল্পিত শহরায়ন, শিল্পায়ন, অবাধে বন উজাড়, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বৃদ্ধি, আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসানোর ফলে গ্রিনহাউজের প্রভাব, পাহাড় কাটা, কল-কারখানা ও যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া, শিল্পের বর্জ্য, প্রযুক্তিগত বর্জ্য অর্থাৎ ই-বর্জ্য, অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ানো, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড, সিএফসি গ্যাস নিঃসরণ, নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রোধকরণ পানি-মাটি বায়ুদূষণ নদীর নাব্যতা হ্রাসকরণ, নির্বিচারে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন ইত্যাদি কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় মেরুর বরফ গলতে শুরু করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন আজ বিশ্বব্যাপী চরম উৎকণ্ঠার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ক্রমেই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতিনিয়ত আমরা ভূমিকম্প, উষ্ণতা বৃদ্ধি, শীতলতা, পাহাড়ি ভূমিধস, অতিবৃষ্টি, অকালবন্যা, অনাবৃষ্টি, মরুকরণ, খরা, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, বজ্রপাত, সুনামি, ভূস্তরের ফাটল, দাবানল, অগ্ন্যুৎপাত, তুষারপাত ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস মৎস্য খাত নানা উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সময় পরিবর্তনের ফলে মাছের আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র ক্রমে সংকুচিত ও বিনষ্ট হচ্ছে, মহাসংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশীয় মাছের অবাধ বংশবিস্তার।
আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনগুলোয় পৃথিবীকে মোকাবেলা করতে হবে মারাত্মক সংক্রামক-অসংক্রামক বেশকিছু সমস্যা। যেমন তীব্র দাবদাহ, বিভিন্ন সংক্রামক-অসংক্রামক রোগবালাই, খাদ্য সংকট, মেরুতে বরফ গলা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় বৃদ্ধি। উৎপাদিত ফসলের পুষ্টিমান কমছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শেষ পর্যন্ত মানবদেহের ওপর। পরিণতি দাঁড়াচ্ছে শুকনো, মেধাহীন, দুর্বল চিত্তের অসুস্থ জাতি। দীর্ঘমেয়াদে খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো দেশ তথা গোটা বিশ্বকে।
এখানেই শেষ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফসল উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে খাদ্যঘাটতি, আমদানিনির্ভরতা। শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য ঘাটতির কারণে প্রয়োজনীয় শিল্পের কাঁচামাল সংকট তথা শিল্প-কারখানায় নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। বেকারত্বের হার বাড়ছে দিন দিন।
পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ। পরিণতিতে ঘটে চলেছে জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি, আর রয়েছে উন্নত দেশের চাপিয়ে দেয়া নীতি বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ড, গ্লোবালাইজেশন, করপোরেট বিজনেস, বহুজাতিক কোম্পানি ইত্যাদি। নানাভাবে গরিব দেশের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। ক্ষতির প্রবাহটা পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর।
ওয়ার্ডওয়াইড লাইফ ফান্ড বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর আয়তনের সমতুল্য আরো দুই গ্রহের সন্ধান করতে হবে। কারণ এ সময়ের মধ্যে পৃথিবীর সব সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাবে। যেখানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হবে বা সেখানে সাহিত্য, সংস্কৃতি, সৃষ্টি-কৃষ্টি, স্বপ্ন সব জীবনবোধ ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নই ওঠে না। সুতরাং বিশ্ববাসীকে সত্য জ্ঞানে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসংযত জীবন পরিহার করে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কিছুটা কমাতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাপক জনসচেতনতা ফলদায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
এখনই দরকার বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা, বিজ্ঞানসম্মত প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা। আমাদের উচিত প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা, সবুজের প্রসার ঘটানো, প্লাস্টিক বর্জন, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং শহরায়ণের নামে পরিবেশ ধ্বংসের লাগাম টেনে ধরা। নাগরিক, রাজনীতিক ও রাষ্ট্র তিন পক্ষের সমন্বয়ে গড়ে তুলতে হবে একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই সমাজ। এখনই সময়Ñ জীবন ও সভ্যতা রক্ষার জন্য সক্রিয় হওয়া লেখক-প্রকাশক,/newschattogram24.net.

আরও পড়ুন