৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কার্গো স্ক্যানার ৩ মাস ধরে অচল

নিজস্ব প্রতিবেদক:চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো অপারেশন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে কাস্টমসের স্ক্যানিং মেশিন বিকল থাকায় আন্তর্জাতিক মান উপেক্ষা করে ব্যাগেজ কেটে পরীক্ষা করে মালামাল খালাস দেওয়া হচ্ছে। এতে যাত্রী, ব্যবসায়ীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। পাশাপাশি কারচুপি, চোরাচালান কিংবা আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য প্রবেশের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রী এবং ব্যবসায়ীদের লাগেজ ও ব্যাগেজ স্ক্যানিং করে কাস্টম্স কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ মে অকেজো হয়ে যায় বিমানবন্দরের কার্গো শেডের একমাত্র স্ক্যানারটি। এরপর স্ক্যানিং কার্যক্রম সচল রাখতে তৎকালীন কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার চপল কুমার চাকমা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের অব্যবহৃত একটি রপ্তানি স্ক্যানিং মেশিন চান। বিমানবন্দর পরিচালকও কার্গো অপারেশন চালু রাখার জন্য স্ক্যানিং মেশিনটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দেন। কথা ছিল ২৯ মে থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত তা ব্যবহার করা হবে এবং এক মাসের মধ্যে কাস্টমসের নিজস্ব স্ক্যানার সচল করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্ধারিত সময় শেষ হলেও অদ্যাবধি স্ক্যানার সচল হয়নি। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দর থেকে নেয়া স্ক্যানার মেশিনটিও গত ১৭ জুলাই থেকে বিকল হয়ে পড়ে। সেই থেকে থেকে অদ্যাবধি কোন ধরনের স্ক্যানিং ছাড়াই, কেবলমাত্র নিজস্ব জনবল দিয়ে ব্যাগ কেটে পরীক্ষা করে মালামাল খালাস দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কার্গো শেডে পড়ে থাকা বেশ কয়েকটি কার্টন কেটে কেটে চেক করছেন কাস্টমসের কর্মীরা। এসময় তারা কার্টনের ভেতরে থাকা বিভিন্ন পণ্যগুলো বের করে করে রেখে পুনরায় আবার তা বন্ধ করে ছাড় দিয়ে দিচ্ছেন। এসময় সিএন্ডএফ এজেন্টের লোকজনকেও অদূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এমনভাবে কার্টনগুলো চেক করা হচ্ছে- যাত্রীদের জন্য এটি যেমন বিভ্রান্তিকর ও অস্বস্তিকর। তেমনি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি বিমানবন্দরে এ ধরনের পদ্ধতি দৃষ্টিকটূ বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীরা একদিকে যেমন বিড়ম্বনায় পড়ছেন, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরাও। প্রবাসী শ্রমিকরা বলছেন, ব্যাগ কেটে পরীক্ষার কারণে তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কার্গো খালাসে সময় বাড়ায় ডেমারেজসহ অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে তাদের।
ভিউ পয়েন্ট সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আবুল বশর বলেন, দীর্ঘদিন স্ক্যানার অচল থাকায় কার্গো হাউসে কাজের দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। প্রবাসীরাও তাদের ব্যাগ পেতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এভাবে চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক মান ক্ষুণ্ন হবে। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিক।
জানতে চাইলে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের দায়িত্বে থাকা (সদ্য বদলি হওয়া) সহকারী কমিশনার প্রদীপ দাশ বলেন, একটি স্ক্যানার বিকল হলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আরেকটি স্ক্যানার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু সেটিও বিকল হয়ে গেছে। যার কারণে চেক করেই পণ্য খালাস দেয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করছি।
এদিকে, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন, স্ক্যানিং মেশিন অচল থাকায় শুধু যাত্রীসেবার মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে না বরং জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। স্ক্যানিং এড়ানো মানে চোরাচালান বা নিষিদ্ধ পণ্য সহজেই প্রবেশের সুযোগ পেয়ে যাওয়া। একই সঙ্গে প্রবাসী ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিও বাড়ছে বহুগুণ। এ সুযোগে আন্তর্জাতিক চক্রগুলোও সুযোগ নিতে পারে। যা দেশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিবে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হবে।

আরও পড়ুন