মোহাম্মদ জাহেদ উল্লাহ চৌধুরী: আর্থিক সংকটে পরিচালন ব্যয় নির্বাহ কঠিন হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ সেবা চালু রাখার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বাসের ড্রাইভার-স্টাফদের বেতন ছাড়াও জ্বালানি খরচসহ মেইনটেনেন্স খরচ বহনের জন্য স্পন্সর হয় জিপিএইচ ইস্পাত।সর্বশেষ ২০২৪ সালে জিপিএইচ ইস্পাত চুক্তির মাধ্যমে স্পন্সরশিপ দুই বছরের জন্য নবায়ন করে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি মোট ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৭২ লাখ টাকা পরিশোধও করে। তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তারা জানায়- অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাকি অর্থ অনুদান দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। হঠাৎ করে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় স্মার্ট স্কুল বাসের বিপুল পরিচালন ব্যয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিসি।
তবে অর্থ সংকট কাটাতে নতুন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান জোগাড়ের চেষ্টার পাশাপাশি নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ফলে আপাতত বন্ধ হচ্ছে না নগরের স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এই বাস সার্ভিস।
সংশ্লিষ্টরা জানান-নগরের স্কুল শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ২০২০ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ১০টি দোতলা বিআরটিসি বাস উপহার দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এসব স্কুল বাসের চলাচল তদারকি করে বিআরটিসি।
জিপিএইচ ইস্পাত অর্থ বন্ধ করে দেয়ায় এরমধ্যেই গুঞ্জন উঠে শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এই বাস সার্ভিস আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. শরীফ উদ্দিন এই গুঞ্জন নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, পরিচালন ব্যয় মেটাতে আমরা নতুন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান খুঁজছি। আশা করছি, খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। স্পন্সর প্রতিষ্ঠান না পাওয়া পর্যন্ত আপদকালীন সংকট মেটাতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মো. শরীফ উদ্দিন আরো বলেন, শুরু থেকেই স্কুল বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু অনেকেই সেটি পরিশোধ করতো না। এখন সেটি আদায়ে আমরা শিক্ষকদের সহায়তা চেয়েছি। নগরের ২২টি স্কুলের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেছি। তারা আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।সুতরাং স্কুল বাস নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এই বাস সার্ভিস বন্ধ করা হবে না। স্কুল বাস চলছে, চলবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান- স্কুল বাসের পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করার জন্য ভাড়া হিসেবে বাস ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিন মাসের জন্য মাথাপিছু ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হবে। সরকারি স্কুলে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এবং বেসরকারি স্কুলে মাসিক বেতনের সঙ্গে এই টাকা আদায় করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরে তা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করা হবে।
চট্টগ্রাম বিআরটিসি বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার বলেন, বাস সার্ভিসটি চালু হওয়ার পর ২০২৪ ও ২০২৫ সালে জিপিএইচ ইস্পাতের মাসে ছয় লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক বছর দেওয়ার পর এ বছরের শুরুতে তারা চিঠি দিয়ে অর্থায়ন করতে না পারার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে।বাসগুলোতে কোনো ভাড়া তোলা হয় না। সেখানে ভাড়ার বাক্স বসানো আছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় পাঁচ টাকা করে বক্সে ফেলবে, এমন উদ্যোগ নেওয়া ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সে টাকা পরিশোধ করে না। ফলে বাস পরিচালনার বিষয়টি আমাদের পুরোপুরি স্পন্সর নির্ভর হয়ে গেছে।
জুলফিকার বলেন, বাস সার্ভিস যেন বন্ধ না হয়, সে চেষ্টা আমরা করছি। এ বছরের শুরু থেকে জিপিএইচ ইস্পাত অর্থায়ন না করলেও আমাদের নিজস্ব খরচে বাসগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে।এ সেবা ঠিক রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথেও আলাপ চলছে, যেন ভাড়া আদায় করা যায়।
জানা গেছে, জিপিএস ট্র্যাকার, জিআইএস প্রযুক্তি, ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস ও আইপি ক্যামেরা স্থাপন করে এসব বাসকে ‘স্মার্ট’ স্কুল বাস নামকরণ করা হয়।এসব বাস ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাসে ওঠা-নামার সময় অভিভাবকের ফোনে স্বয়ংক্রিয় এসএমএস দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থানও মনিটরিং করা যায়। স্মার্ট বাস সার্ভিস পরিচালনার এ ধারণার জন্য ‘স্মার্ট জেলা উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ-২০২৩’ এর আওতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
