২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে তিন সাংগঠনিক জেলায় কমিটি নেই বিএনপি’র

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে তিন সাংগঠনিক জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলেছে ঢিমেতালে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে জেলাগুলোতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি নেতাদের বিরোধ আরও চাঙা হয়ে উঠেছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।বিশেষ করে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ তিন সাংগঠনিক জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন থানা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে দলটি। এ নিয়ে তৃণমূলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এর আগে ১৪ মাসে সম্মেলন করে চট্টগ্রামে একটি কমিটিও গঠন করতে পারেনি বিএনপি।
সাংগঠনিক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরে আগে ৪১টি ওয়ার্ড ও ২টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড মিলে মোট ওয়ার্ড ছিল ৪৩টি। এবার আরো ৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড বৃদ্ধি করে মোট ওয়ার্ড হয়েছে ৪৮টি। ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর নগরের ১৫ থানা ও ৪৩ ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেয় নগর বিএনপি। এরপর গত ৩ জুন দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এসব ওয়ার্ডের তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ওই কমিটিতে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছাড়াও একজন করে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এরপর নগরীতে আরো ৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড বৃদ্ধি করে ওয়ার্ড বাড়ানো হয় ৪৮টি। এর মধ্যে গত ২৪ জুন ৩১টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও অবশিষ্ট ১৭ ওয়ার্ডের এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত ৩১ ওয়ার্ডকে তখন ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলন করে ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ৭৮ দিনেও একটি ওয়ার্ডেরও সম্মেলন করতে পারেনি ওয়ার্ড কমিটি। একইসাথে গত ১১ মাসেও নগরের ১৫ থানার কমিটি ঘোষণা দিতে পারেনি দলটি। একারণে হতাশায় ভুগছেন দলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কমিটি। এ তিন সাংগঠনিক জেলায় সবমিলে উপজেলা ও থানা কমিটি রয়েছে সমান সংখ্যক ১৫টি করে ৩০টি, সাংগঠনিক ইউনিট ১টি এবং পৌরসভা ১৫টি। এর মধ্যে উত্তর জেলার ৭ উপজেলা ও ৯ পৌরসভা বিএনপির কমিটি থাকলেও নগরের ১৫ থানা এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ৮ উপজেলা, ১ সাংগঠনিক ইউনিট এবং ৬ পৌরসভার কোন কমিটি নেই। এমন কি গত আড়াই মাস ধরে নেই উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিও। গত ২৯ জুলাই রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর কেন্দ্র থেকে এ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় যেখানে কমিটি নেই সেখানে স্থবির হয়ে পড়েছে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
এদিকে চলতি বছরের ২২ মে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায় জেলার আওতাধীন মেয়াদোত্তীর্ণ সকল উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। দলের সাংগঠনিক গতিশীলতা ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে জেলা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। কিন্তু গত সাড়ে ৪ মাসেও কমিটি ছাড়াই চলছে দক্ষিণ জেলার আওতাধীন ৮ উপজেলা, ৬ পৌরসভা ও ১ সাংগঠনিক ইউনিট। তবে উপজেলা, পৌরসভা ও সাংগঠনিক ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কমিটি। যে কোন সময় কমিটি ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বর্তমানে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত এসব কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে।
বিএনপির কয়েকজন ত্যাগী নেতা জানান, যেখানে অন্য দল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে চষে বেড়াচ্ছে, সেখানে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা দূরে কথা- উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিও করতে পারেনি বিএনপি। বর্তমানে কমিটি না থাকায় মাঠে বিএনপির মধ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বিগত সরকারের ১৫ বছরে ঠিকমতো সম্মেলন করতে পারেনি দলটি। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর মুক্ত পরিবেশের ১৪ মাসে সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি চট্টগ্রামে একটিও জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও মহানগর কমিটি করতে পারেনি। মূলত অভ্যন্তরীণ কোন্দল, শৃঙ্খলার অভাব, নেতৃত্বের মধ্যে আস্থার সংকট এবং যোগ্য ও ত্যাগীদের কাঙ্খিত পদ না দেওয়ার কারণে দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলে আসছে। তাছাড়া বর্তমান দলে প্রভাব বেড়েছে কিছু সুবিধাবাদী নেতাকর্মীর। তাদের প্রতাপে অনেকটা কোণঠাসা অতীতে দলের দূসময়ে হাল ধরা, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকা এবং মামলার শিকার হওয়া অনেক নেতাকর্মী। এ অবস্থায় সম্মেলন করে কমিটি গঠন না করার কারণে সুবিধাবাদীরা নানা উপায়ে পদ ভাগিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ নিয়ে দলের মধ্যে জবাবদিহিতার চর্চা কম থাকায় এসব কমিটি কৌশলে বছরের পর বছর সময় পার করে দিচ্ছে। এ কারণে তিন মাস কিংবা ৬ মাস মেয়াদের আহ্বায়ক কমিটি সময় পার করে দিচ্ছে দুই থেকে তিন বছর। এতে দলের মধ্যে উঠে আসছে না নতুন নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন