১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ইরান-ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র পড়লে দাম বাড়ে ভোজ্যতেলের

নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম থেকে ইরানের দূরত্ব প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার। আর ইসরায়েলের দূরত্ব আরও বেশি-৫ হাজার ৬৭৮ কিলোমিটার। কিন্তু বহু দূরের হয়েও চলমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব কিনা পড়ছে বন্দরনগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারখ্যাত খাতুনগঞ্জে।মধ্যেপ্রাচ্যের দুই দেশের শহরগুলোতে মিসাইল পড়ার খবর পেলেই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে আবার কমিয়ে দেন দাম। দুই দেশের উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে যেন খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম ওঠানামা করছে। বিশেষ করে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকির পর সেটিকে ‘সুযোগ’ হিসেবে নিয়েছেন ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
অথচ হরমুজ প্রণালী দিয়ে মূলত জ্বালানি তেল (পেট্রোলিয়াাম) পরিবহন করা হয়, যা পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত উভয় প্রকারের হতে পারে। এছাড়া এই প্রণালী দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসও (এলএনজি) পরিবহন করা হয়। ভোজ্য তেল, এই পথ দিয়ে সাধারণত পরিবহন করা হয় না। কিন্তু যে তেলটি ওই প্রণালী দিয়ে তেমন একটা পরিবহনই করা হয় না সেটিই কিনা ইচ্ছেমতো বাড়াচ্ছেন-কমাচ্ছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। যেখানে যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশে ভোজ্যতেল আমদানিতে কোনো প্রভাবই পড়েনি।বাজারে সাধারণত তিন ধরনের ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। সেগুলো হলো সয়াবিন, সুপার পাম অয়েল ও পাম অয়েল। প্রতি মণে তেল পাওয়া যায় ৩৭ দশমিক ৩২ কেজি।
খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ভোজ্য তেল বিক্রির প্রতিষ্ঠান ঘুরে গত এক সপ্তাহে ভোজ্যতেলের দাম ওঠানামার চিত্র পাওয়া গেছে। কোরবানির পর বাজার পুরোদমে চালু হলে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার টাকা। আর সুপার পাম তেল ৫ হাজার ৭০০ টাকা এবং আর পাম তেল বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৬০০ টাকায়। এরপর ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার মধ্য দিয়ে দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়। পরে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধের দামামার মধ্যেই তিন ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন ৬ হাজার ৩০০ টাকা, সুপার পাম অয়েল ৫ হাজার ৮৩০, পাম অয়েল ৫ হাজার ৭১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দাম আরও বেশি ছিল। তবে কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার পর ইরান ও ইসরায়েল একটি সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশাপাশি ইরান ও ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম থেকেও যুদ্ধবিরতি শুরুর খবর দেওয়া হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির খবরে গত দুদিনে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণে ৮০-১০০ টাকা করে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন যুদ্ধের দামামা চললে দাম আবারও বেড়ে যেতে পারে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স ঈসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা বেড়েছিল। বিশেষ করে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হতে পারে-এমন আশঙ্কা থেকেই দাম বেড়েছিল। তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর মণে ১০০ টাকা করে কমেছে।
হরমুজ প্রণালী দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন হয় না-এরপরও দাম বাড়া নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুদ্ধের কারণে হরমুজ প্রণালী দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহন বন্ধ হওয়ার পথে ছিল। জ্বালানি তেল বাড়লে সবকিছুতেই প্রভাব পড়ে।তবে যুদ্ধের প্রভাবে ভোজ্যতেল আমদানিতে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন দেশের ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। আমদানির হিসাবে, বাংলাদেশে পাম তেল আমদানি হয় প্রায় ৭০ শতাংশ। সয়াবিন তেল আমদানি হয় ৩০ শতাংশ।
তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামে তেমন একটা হেরফের হয়নি বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের আল আমিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সুরুজ মিয়া। তিনি বলেন, বোতলজাত তেলের মধ্যে রূপচাঁদা পাঁচ লিটার ৮৯৫, দুই লিটার ৩৬৮, ১ লিটার ১৮৪ এবং আধা লিটার ৯৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন