অনলাইন ডেস্ক: বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯০.৬২ হাজার মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে প্রায় ৬ হাজার ১৪৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য সপ্তাহ পালনের মধ্য দিয়ে আমরা মৎস্য খাতের অবদান জনগণের সামনে তুলে ধরতে চাই। আপনারা জানেন, মৎস্য খাত দেশের মোট জিডিপির ২.৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২২.২৬ শতাংশ। ১২ লাখ নারীসহ প্রায় ২ কোটি মানুষ, অর্থাৎ দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের সঙ্গে যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, আমিষের চাহিদা মেটাতে মাথাপিছু দৈনিক ৬০ গ্রাম মাছের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমানে প্রাপ্যতা ৬৭.৮০ গ্রামে উন্নীত হয়েছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তবুও মাথাপিছু মাছ গ্রহণের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে।
বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আর্থিক সংকট সত্ত্বেও মৎস্য খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে, যা খাতটির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মৎস্য খাতের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বে ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ প্রথম, তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ এবং এশিয়ায় তৃতীয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিঠা পানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় এবং বন্ধ জলাশয়ে চাষের মাছ উৎপাদনে গত পাঁচ বছর ধরে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এছাড়া, ক্রাস্টাশিয়ান্স (চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি) আহরণে বাংলাদেশ অষ্টম এবং সামুদ্রিক মাছ আহরণে ১৪তম স্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মা ইলিশ ও জাটকাসহ অন্যান্য মাছ আহরণ নিষিদ্ধকালে প্রান্তিক ও প্রকৃত মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ (চাল) কর্মসূচির আওতায় মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৯টি জেলে পরিবারকে ১ লাখ ৪ হাজার ৬৬২.৬৭৫ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছে। এই সহায়তা পরিবারপ্রতি ৫০ কেজিতে উন্নীত করার প্রস্তাব খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।দাদনের দুষ্টচক্র থেকে মৎস্যজীবীদের মুক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। আপাতত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, মৎস্য, গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খামারে বিদ্যুৎ উচ্চ হারে পরিশোধ করতে হয়, ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ খাতকে কৃষিখাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে আবেদন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ফরিদা আখতার।
