৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন

অনলাইন ডেস্ক: ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে রংপুরের গঙ্গাচড়ার উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন।মঙ্গলবার থেকে গ্রামের ভাঙচুর করা বাড়িগুলো মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা। তিনি বলেন, “হিন্দু সম্প্রদায়ের ২২টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আমরা আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ তাদের বাড়িঘর ঠিকঠাক করে দিচ্ছি।“এবং আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনরে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আজ তারা বাড়িতে ফিরতে শুরু করছে।”ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে শনিবার গ্রামের এক কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন সন্ধ্যায় পাশের এলাকা থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ছেলেটির গ্রামে প্রবেশ করে। তারা বাড়িঘরে হামলা চালায়।‘উত্তেজিত জনতা’ শনিবার রাত ও রোববার বিকালে ওই কিশোরের বাড়িসহ ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের’ বাড়িগুলোতে ভাঙচুর চালায়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।এ ঘটনার পর সোমবার আতঙ্কে লোকজন বাড়ি ছেড়ে যায়। মঙ্গলবার থেকে তাদের কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।এদিকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল।এদিকে সোমবার এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর দেওয়া বিবৃতিতে গঙ্গাচড়ায় ধর্ম অবমাননার অজুহাতে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অজুহাতে বাবা-ছেলেকে প্রকাশ্যে মারধর, রাজধানীর খিলক্ষেতে প্রকাশ্যে বুলডোজার দিয়ে মন্দির ভেঙে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে, এসব অপতৎপরতা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। এ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় জনমনে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বিভক্তি বিস্তারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
সব সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে মহিলা পরিষদ বলেছে, এসব ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, বিচার বা শাস্তি হয় না বলে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা সমাজের মধ্যে ঘটে চলেছে। সব ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতেও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।
বাসদ বিবৃতিতে বলেছে, ১৭ বছর বয়সের এক কিশোরের ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত এই হামলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাহীনতার চিত্র ফুটে উঠেছে।পুলিশ সেই কিশোরকে গ্রেপ্তার করার পরেও উত্তেজনা সৃষ্টি করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বলে মন্তব্য করেছে বাসদ।এ ঘটনায় দায়ীদের আইনের আওতায় আনা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিরাপত্তা বিধান করা এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বাসদের বিবৃতিতে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এক বিবৃতিতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও মারধরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। উদীচীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বিবৃতিতে এ হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন