৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

 খেলা বন্ধ এক মাস : মাঠে ডিম পেড়েছে পাখি

ক্রীড়া ডেস্ক: সবুজ মাঠের বুক জুড়ে ছড়িয়ে ছিল খেলোয়াড়দের ঘাম, উল্লাস আর দর্শকের শোরগোল। হঠাৎই সেই মাঠে দেখা মিলল এক ভিন্ন দৃশ্যের—মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি ছোট্ট দেশি পাখি, প্লোভার, নীরবে ডিম পেড়ে বসেছে। যেখানে ছিল শত মানুষের খেলার তাগিদ, সেখানে জন্ম নিল জীবনের নতুন গোলকধাঁধা। খেলার আনন্দ থমকে গেল, আর প্রথম স্থান পেল বন্যপ্রাণীর অধিকার। এই অল্প মুহূর্তেই অস্ট্রেলিয়া দেখাল, প্রকৃতির জন্য কখনও কখনও মানুষকেই অপেক্ষা করতে হয়।ইয়াহু নিউজের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ক্যানবেরা থেকে ২০ মিনিট দূরত্বের জেরাবম্বেরা রিজিওনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ফুটবল খেলতে যান খেলোয়াড়রা। এ সময় তারা জানতে পারেন, মাঠের একদম মাঝখানে এক প্লোভার পাখি ডিম দিয়েছে।
জানা যায়, প্লোভার পাখি একটি দেশি সংরক্ষিত প্রজাতি। সাধারণত বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর অত্যন্ত রক্ষণশীল হয়ে থাকে। এমনকি বিপদ আঁচ করলে ভয়ানকভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার কারণে পাখিটি পরিচিত। এ সময় তারা ডানা ঝাপটে, তীব্র শব্দ করে এবং ঝাঁপিয়ে পড়ার মাধ্যমে বাসার কাছ থেকে অনধিকার প্রবেশকারীদের দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে।এসব কারণে পাখির ডিম পাড়ার বিষয়টি জানার পরই তাদের ম্যাচ পাশের আরেকটি মাঠে সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্থানীয় কাউন্সিল ইয়াহু নিউজ অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়েছে, আঞ্চলিক স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কৃত্রিম ফুটবল মাঠে একটি প্লোভার ডিম দিয়েছে। যে কারণে স্থানীয় বন্য প্রাণী সংস্থা ওয়াইল্ডকেয়ারের পরামর্শে ক্লাব ম্যাচগুলো পাশের মাঠে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পাখিসংক্রান্ত কারণে মাঠটি সর্বোচ্চ ২৮ দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিল বলেছে, ‘আমাদের দেশি প্রজাতিগুলো রক্ষায় সক্রিয় হতে হবে। ডিম সরানো প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের আনতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে অনুমতি নিতে হবে।’
এদিকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে স্থানীয় ফুটবল দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে কাউন্সিল। এর পাশাপাশি তারা খেলা ও অনুশীলন সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে এবং কর্তৃপক্ষকে বিকল্প মাঠের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্বজুড়ে যেখানে উন্নয়ন ও বিনোদনের নামে প্রকৃতি ও প্রাণীকুলের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে, সেখানে একটি পাখির ডিমের জন্য পুরো মাঠ বন্ধ করা নিঃসন্দেহে পরিবেশ সচেতনতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি শুধু অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃতি–প্রাণী রক্ষার মনোভাবই নয়, মানুষের সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের সহাবস্থানের গুরুত্বও স্মরণ করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন