রামগড় প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির রামগড় সদর ইউনিয়নের লামকুপাড়ায় সরকারি ভ্যাকসিন দেয়ার পর ১২ দিনে ১৬টি গরু-ছাগল মারা যাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর পথে রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক পশু। গ্রামবাসীর দাবি, পশু চিকিৎসকের ভুল ভ্যাকসিনের কারণে তাদের এ সর্বনাশ হয়েছে।এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে গরু-ছাগল নিয়ে রামগড় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জড়ো হয়ে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পশু চিকিৎসকের পরামর্শে সরকারি ভ্যাকসিন দেওয়ার পরই এ ঘটনা ঘটে। গত ১৫ এপ্রিল ভ্যাকসিন দেওয়ার একদিন পার না হতেই গরু ও ছাগলের অসুস্থতা দেখা দেয়। আস্তে আস্তে একে একে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত ১৬টি গরু-ছাগল মারা যায়।
গ্রামবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. রুবায়েতুল ইসলামের পরামর্শে তার দুই সহকারী জামাল উদ্দিন ও রমজান এসব পশুকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন।পশু মালিকদের দাবি, এসব ভ্যাকসিনে সমস্যা ছিল অথবা একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে সবগুলো পশুকে ভ্যাকসিন দেয়ায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে গুরু-ছাগলকে ভ্যাকসিন দিতে সরকারি পশু চিকিৎসক এসেছেন—এমন খবরে পশুদের নিয়ে গিয়ে ভ্যাকসিন দেন গ্রামবাসী। কিন্তু এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পশুর অতিরিক্ত জ্বর, চামড়ায় গুটি ও ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া শুরু হয়। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতে গরু-ছাগলগুলো মরতে শুরু করে।
লুৎফর রহমান নামে এক খামারি বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার দুদিন পর তার ৩টি ছাগল ও ২টি গরু মারা যায়। আরো ১৫টি ছাগল ধীরে ধীরে অসুস্থ হচ্ছে। গ্রামে যারা ভ্যাকসিন দিয়েছে তাদের সবার গরু গুরুতর অসুস্থ। আগামী কোরবানে বিক্রি করবো-এমন আশায় ঋণ নিয়ে গরু কিনেছি। এখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’
লামকুপাড়া গ্রামের গৃহিনী সায়েরা খাতুন বলেন, ‘আমার দিনমজুর স্বামী বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকেন। ঋণের টাকায় গরু-ছাগল পালন করে সংসার চালাই। ভ্যাকসিন দেয়ার পর আমার ৩টা ছাগল মারা গেছে। আরো ৩টা অসুস্থ। ঋণ কিভাবে পরিশোধ করব জানি না।’
একই অভিযোগ লামকুপাড়ার ওবায়দুল হক, আবুল কাশেম সওদাগর, আবদুল করিম, শান্তনু দেবী এবং চিকনি ত্রিপুরারও। তারা বলছেন, পশু চিকিৎসক ভুল ভ্যাকসিন দেয়ায় তাদের এ সর্বনাশ হয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা দাবি করেন।
তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. রুবায়েতুল ইসলাম বলছেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, সাধারণত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সফল ভ্যাকসিন মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়। মেয়াদ ও গুণগত মান দেখেই সারাদেশে যে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে এখানেও সেগুলো দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারপরও এমন খবরে ৩ দিন এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছি।’ স্থানীয় আক্রান্ত কোনো গরু বা ছাগল থেকে রোগ সংক্রমিত হয়ে পশুগুলো মারা যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। রামগড় থানার উপ-পরিদর্শক নুর উদ্দিন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের আপাতত শান্ত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদন্ত করে ব্যবস্থার নিবে।’ রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতা আফরিন বলেন, ‘স্থানীয় সূত্রে গরু ছাগল মারা যাওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
