মোহাম্মদ জাহেদ উল্ল্যাহ চৌধুরী: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মসলার খুচরা বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। পাইকারী বাজারে মসলার দাম ঠিক থাকলেও খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, পরিবহন খরচ,শ্রমিক মজুরি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তারা এসব মসলা কিনছেন বেশি দামে, ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে উচ্চমূল্যে। এদিকে গত বছরের তুলনায় বেশ কিছু মসলার দাম কমলেও বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা এখনও উঁচুমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারগুলোতে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কালোবাজারিদের স্টককরণের ফলে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ার পরও আমদানি মূল্যের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এই অবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর ও কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরাও মসলা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বাজার পরিচালনা করতে পারছি না। আমদানির দামের চেয়ে অনেক সময় মসলার বিক্রয়মূল্য কম থাকছে। কিন্তু বিক্রিতে সমস্যা হচ্ছে, কারণ প্রচুর পরিমাণে মসলা কালোবাজারিরা মজুদ করে রেখেছে। তাদের কারণেই বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।
শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও শুকনা মরিচের দাম তুলনামূলক কম থাকলেও এলাচ, জিরা, দারুচিনি ও ধনিয়া এখনো বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পরিবহন খরচ, শ্রমিক মজুরি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তারা এসব মসলা কিনছেন বেশি দামে, তাই চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কাজীর দেউড়ি বাজারের এক দোকানি বলেন, দাম সব জায়গায় এক। কারণ হলো কেউ কম দামে মসলা কিনতে পারছে না। দাম কম দেখছি শুধু টিভি আর পত্রিকায়, বাস্তবে আমরা কেউ কম দামে পাচ্ছি না। রেয়াজ উদ্দিন বাজারের আরেক দোকানি জানান, আমরা বাড়তি দামে কিনছি, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। কাস্টমার এমনিতেই এসব মসলা খুব বেশি কিনে না। তার ওপর দাম বেশি থাকায় ক্রেতা আসছে না। হয়তো পরে আসবে। তবে সংকট নেই, বাজারে যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়েও বেশি মসলা মজুদ রয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, বেশ কিছু মসলার দাম গত বছরের তুলনায় কমেছে। পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় ২০ টাকা কম। আদা ১১০ টাকায় (কমেছে ১৫০-২৯০ টাকা), রসুন ১৮০ টাকায় (৩৫ টাকা কম), শুকনা মরিচ ২৮০ টাকায় (১২০ টাকা কম), তেজপাতা ১৪০ টাকায় (১০ টাকা কম), লবঙ্গ ১,২৫০ টাকায় (৫০ টাকা কম), গোলমরিচ ১,২০০ টাকায় (প্রায় ১০০ টাকা কম), দারুচিনি ৫৫০ টাকায় (১০ টাকা কম), ধনিয়া ২০০ টাকায় (২০ টাকা কম) এবং জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। তবে সবচেয়ে দামি মসলাগুলোর মধ্যে রয়েছে এলাচ। সাদা এলাচ কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা কমে এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩,৮০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত, আর কালো এলাচ ২০০ টাকা কমে কেজি বিক্রি হচ্ছে ২,৬০০ টাকায়।
এদিকে এবারের বাজারে অনেক মসলার দাম গত বছরের তুলনায় কম উল্লেখ করে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, তবে তা যথেষ্ট নয়, দাম আরও কমাতে হবে। বাজারে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে কিছু নির্দিষ্ট মসলাকে ঘিরে, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণ সরকারেরই দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, পাইকার মিথ্যা বলছে নাকি খুচরা ব্যবসায়ীরা, তা চিহ্নিত করা জরুরি।
