৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কাঁচাবাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি মিলছে না। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা। ডিম, মাছ-মাংসের দরও চড়া। কোনো পণ্যের দাম আজ হয়তো কিছুটা কম, কিন্তু কাল আবারও বেড়ে যাচ্ছে। এক দোকানে একরকম দাম, পাশের দোকানেই বেশি- পরিস্থিতি এমনই। বিক্রেতাদের অজুহাত বরাবরের মতো বৃষ্টির কারণে সরবরাহ সংকট। অথচ বাজার পণ্যে সয়লাব।ভোক্তারা জানাচ্ছেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। বলছেন, প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের বাজারে লাগামছাড়া অবস্থা চলছে।
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে কথা হয় স্কুলশিক্ষক ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে। নিত্যপণ্যের দর নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজারে এলে মন খারাপ হয়ে যায়। সবকিছুর দাম বাড়তি। ১০০ টাকার নিচে তো ভালো সবজিই পাচ্ছি না।’চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায় গত দু’সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, যেখান থেকে সাধারণত কৃষিজাত পণ্য চট্টগ্রামের বাজারে আসে, সেখানেও বৃষ্টি হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। আগের সপ্তাহসহ হিসেব করলে সবজির দাম কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। কাঁকরোল, ঝিঙা, পটল, ঢেঁড়শ, শসা, করলা প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বরবটির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দামও ৮০ থেকে ১০০ টাকা। টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী, লাউ, মুলা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গাজর ১৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, শালগম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র মিষ্টিকুমড়ার দাম আছে নাগালের মধ্যে, প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুন্সীগঞ্জের আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচামরিচের দাম গত সপ্তাহেও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা ছিল। এ সপ্তাহে সেটা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ধনেপাতার দামও ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। তবে আগের মতোই শাকের মধ্যে কচুশাক ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া শাক ৫০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও লালশাক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারের এমন পরিস্থিতি নিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শিবলী ফারুক বলেন, ‘আমাদের কাছে সবজি আসে মূলত উত্তরবঙ্গ থেকে। সেখানে টানা বৃষ্টির কারণে ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। আবার চট্টগ্রামেও বৃষ্টির কারণে পরিবহন নিয়ে সংকট হচ্ছে। এতে সরবরাহ মাসখানেক ধরেই কম। যে সবজি এখন বাজারে আসছে, সেগুলো বাড়তি দামে কিনেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন খরচও সমন্বয় করতে হচ্ছে।’
গত সপ্তাহে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯০ টাকায়। এর মধ্যে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বরং আমদানি করা পেঁয়াজের চেয়ে বাড়তি। দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হয়েছে, যা আগেরমতোই আছে।
ডিমের দাম এ সপ্তাহে ডজনপ্রতি অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। ফার্মের মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের চড়া দর এখনও বহাল আছে। নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে লইট্যা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, ফাইস্যা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পোয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শাপলা পাতা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, রুপচান্দা ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ইলিশ এখনও সাধারণ ক্রেতার নাগালে আসেনি। খুচরা বাজারে এক-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ থেকে ২৪০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০ টাকা, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০-২০০০ টাকা এবং জাটকা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। দুই-আড়াই কেজি ওজনের বড় ইলিশ মাছ প্রতিকেজি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০, পুঁটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৪৫০, কৈ ২০০ থেকে ২২০ এবং তেলাপিয়া ও পাঙাশ মিলছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকায়।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির দাম কেজিতে অন্তঃত ১০০ টাকা বেড়ে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩১০ টাকা, পাকিস্তানি কক ৩৫০ টাকা এবং জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসি ও পাঁঠা ছাগলের মাংস ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ের গরু-খাসির মাংস বিক্রেতা মো. সোলায়মান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাংসের দাম দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তি। সস্তায় আমরাই কিনতে পারছি না, বিক্রি করবো কীভাবে ! আবার গোশতের কাস্টমারও তো নেই।’
চালের দরও আগের মতো চড়া আছে। ‍খুচরায় সরু চালের মধ্যে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রসিদ- এসব ব্র্যান্ডের মিনিটেক চাল প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মিনিকেট আতপ মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। স্বর্ণা ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের মাঝারি মানের চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে মুদিপণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। প্রতি কেজি ছোট মসুর ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মান ভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
আর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত সাদা চিনি ১২৫ টাকা, খোলা সাদা চিনি ১২০ টাকা, খোলা লালচিনি ১৪০ টাকা, প্যাকেট লালচিনি ১৭০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ৯০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৫০ টাকায় দরে বিক্রি হয়েছে।

আরও পড়ুন