২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এক নারীর বিয়ে দুই ভাইয়ের সাথে

অন্তর্জাতিক ডেস্ক: দুই ভাইয়ের এক স্ত্রী, কি ‘এক ফুল, দো মালি’ সিনেমা ভাবছেন তো— ধুর না, গল্প নয়, একেবারে বাস্তব ঘটনা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের। দেশটির হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার শিলাই গ্রামে ঘটেছে এমনই ব্যতিক্রমী এক বিয়ে, যেখানে এক নারী একসঙ্গে দুই ভাইকে বিয়ে করেছেন।শিলাইয়ের দুই ভাই প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগিকে একই সঙ্গে বিয়ে করেছেন কুনহাট গ্রামের সুনিতা চৌহান। গত ১২ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলে, যেখানে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বড় ভাই প্রদীপ একজন সরকারি চাকরিজীবী এবং ছোট ভাই কপিল বিদেশে চাকরি করেন।এই বিয়ে তারা নিজেরাই সম্মতিতে করেছেন বলে জানান তিনজনই। পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো বাধা আসেনি, বরং তারা সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এই ধরনের বিয়ে হিমাচলের কিছু অংশে প্রচলিত ‘পলিআন্ড্রি’ (Polyandry) বা ‘দ্রৌপদী প্রথা’ হিসেবে পরিচিত। গ্রিক শব্দ ‘পলি’ অর্থ ‘অনেক’ এবং ‘আন্দ্রোস’ অর্থ ‘পুরুষ’ থেকে এসেছে এই শব্দটি। এই প্রথায় একজন নারী একাধিক পুরুষকে, সাধারণত একই পরিবারের ভাইদের বিবাহ করেন।
ভারতের সাধারণ আইন অনুযায়ী এই ধরনের বহু-পতিত্ব (polyandry) বৈধ নয় এবং তা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে হিমাচলের বিশেষ করে সিরমৌর জেলার হাট্টি উপজাতি, লাহুল-স্পিতি ও কিন্নর অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এটি সামাজিকভাবে এখনো স্বীকৃত।
কুন্দন সিং শাস্ত্রী, হাট্টি কেন্দ্রীয় সমিতির সম্পাদক, জানান—এই প্রথার পিছনে রয়েছে সম্পত্তির ভাগাভাগি এড়ানো এবং পারিবারিক ঐক্য বজায় রাখার চিন্তাভাবনা। তাদের বিশ্বাস, একজন স্বামীর মৃত্যু হলেও দ্বিতীয় স্বামীর মাধ্যমে সংসার টিকে থাকবে। একইসঙ্গে ভাইদের মধ্যে সদ্ভাব ও ঐক্য বাড়বে।ট্রান্স-গিরি অঞ্চলের ১৩০০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে থাকা ১৫৪টি গ্রামের মধ্যে ১৪৭টিতেই হাট্টি উপজাতির বাস। গত ছয় বছরে এই অঞ্চলে পাঁচটি পলিআন্ড্রাস বিয়ের ঘটনা ঘটেছে।তবে আধুনিক শিক্ষার প্রসার, শহরমুখী জীবনধারা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ফলে এই প্রথার অনুসরণ দিনে দিনে কমে আসছে। অনেকেই এখন আর এই পথে হাঁটতে চান না।তবুও, সুনিতা চৌহান এবং দুই নেগি ভাইয়ের এই বিয়ে হিমাচলের এক শতাব্দীপ্রাচীন সমাজব্যবস্থার জীবন্ত নিদর্শন হয়ে থাকল।

 

আরও পড়ুন