৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অনিয়মে ভরপুর ভাটিখাইনের মির্জা আলী লেদু শাহ দাখিল মাদ্রাসা, ইউএনও বরাবর স্থানীয়দের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন মির্জা আলী লেদু শাহ দাখিল মাদ্রাসায় নানা অনিয়মে ভরপুর হয়ে উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের ফলাফল আশানুরূপ নয় অথচ মাদ্রাসার সুপারের ব্যক্তিগত উন্নতি স্থানীয়দের চোখে পড়ার মতো। এলাকাবাসীর ভাষায়, মাদ্রাসাটিকে ব্যবহার করে ‘আঙুল ফুলে কলা গাছে রূপান্তর’ হওয়া সুপারের জীবনযাত্রা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর স্থানীয়দের দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল মাবুদ দীর্ঘদিন ধরে সরকারি অনুদান ও দানকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। অভিযোগে বলা হয়-সরকারি অনুদানের স্বচ্ছ হিসাব না রাখা, নামমাত্র হিফজখানা ও এতিমখানা চালিয়ে অনুদান গ্রহণ, শিক্ষকদের হয়রানি ও বেতন বকেয়া রাখা,অনিয়মিত পাঠদান ও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি,স্থানীয় অংশগ্রহণ ছাড়াই ‘পকেট কমিটি’ দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা,জমি দখল, আত্মীয়প্রীতি ও অবৈধ নিয়োগসহ নানা কর্মকাণ্ড চলছে।’
এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, স্ত্রীকে ভুয়া শিক্ষক দেখিয়ে এমপিওভুক্ত বেতন উত্তোলন, মিথ্যা শিক্ষার্থী সংখ্যা দেখিয়ে অতিরিক্ত অনুদান গ্রহণ, সনদপত্র বাণিজ্য, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী ভর্তি বাণিজ্য এবং মাদ্রাসার অর্থ দিয়ে ব্যক্তিগত জমি ও ব্যবসায় গড়ে তোলার।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘মাদ্রাসা ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করে সুপার নামে-বেনামে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জমি কিনেছেন। এক মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আরেক মাদ্রাসা দেখিয়ে নানা ভাবে মাদ্রাসা বোর্ডের সাথে প্রতারণা করেন। ফ্যাস্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে গত ১৬ বছরে মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দলের নেতাদের দাওয়াত দিয়ে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন। তবে সেই অর্থের কোনো হিসাব প্রতিষ্ঠান পায়নি। অভিযোগ রয়েছে, অনুদান বাবদ আসা গরু, ছাগল ও মহিষের টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
অভিযোগকারীরা জানান, অনিয়মের আলোচনা উঠলেই রাতারাতি সুপারের পকেট কমিটি গঠন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী অভিভাবক ভোটে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও সুপার ব্যক্তিগত লোকজনকে সভাপতি ও সেক্রেটারি বানিয়ে নেন, যাদের সন্তানও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নন। শিক্ষার মান ক্রমেই নিম্নমুখী প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করতে পারেনি। বরং ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও মাদ্রাসায় ক্লাস চলে মাত্র সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সপ্তাহে একদিন মাদ্রাসায় উপস্থিত হলেও সুপার প্রতিদিন হাজিরা সাইন করেন। প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহের পর তদন্ত শুরু হবে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগকারী ও স্থানীয় ভূমিদাতা, মির্জা আলী মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন এবং সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আশিকুর মোস্তফা তাইফু জানান, এসব অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থা নষ্ট হয়েছে। এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এছাড়া পটিয়ার বিএনপি নেতা আমিনুল হক আমিন ও কাজী নাজিম নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন ও সুপারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘মাদ্রাসার নিয়মিত শিক্ষার মানোন্নয়ন কার্যক্রম সঠিক রাখতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরি। এছাড়া দ্রুত তদন্ত করে পুনরায় সুপারের সনদ ও শিক্ষকদের সনদ যাচাই-বাছাই এবং মাদ্রাসা বোর্ডের নিয়মনীতি অনুসরণ করে একটি স্বচ্ছ পরিচালনা কমিটি গঠন করা হোক। তাঁরা আশা করছেন, প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ পুনরুদ্ধার হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল মাবুদ বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে ডাকলে উনাকে আমি অভিযোগের জবাব দেব।’
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মির্জা আলী লেদু শাহ দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত অনুমোদন পায়। মূলত, কতৃত্ববাদি, অনিয়ম দুনীতির কারণে মাদ্রাসাটি শিক্ষার মানোন্নয়ন নেই।

আরও পড়ুন