অনলাইন ডেস্ক: গাজীপুরের আশরাফুল আলম একসময় সৌদি আরবে গাড়ি চালাতেন। ২০২৪ সালে সেখানে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। সে সময় সড়কেই হারিয়ে ফেলেন তার বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল। এরপর গাড়ি চালানো অক্ষম হয়ে ফেরেন নিজ বাড়ি কাপাসিয়ায়।আঙ্গুল হারানো হাত নিয়ে হাসপাতালে-হাসপাতালে ঘুরেছেন। কিন্তু কেউ তাকে আশা দিতে পারেনি। সবশেষ কুমিল্লায় এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আশা আলো দেখতে পান। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে একদল চিকিৎসক তার অস্ত্রোপচার করেছেন। তার হাতের আঙ্গুলের জায়গায় পায়ের আঙ্গুল এনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।গত সপ্তাহে কুমিল্লার পিপলস হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কামরুল ইসলাম মামুনের নেতৃত্বে তিনজন চিকিৎসকের একটি দল।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যয়বহুল চিকিৎসা। সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা তেমন নেই। তবে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা গিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করছেন। জেলা শহরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো ঘটনা দেখা যায় না।
চিকিৎসক কামরুল ইসলাম মামুন বলেন, “কুমিল্লায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের এই ঘটনাই প্রথম। এর আগে আমরা কুমিল্লায় শরীরের এক স্থান থেকে আঙুল এনে অন্য স্থানে প্রতিস্থাপনের ঘটনা শুনিনি। তবে এর মাঝে আরেকটি ভিন্ন বিষয় আছে। গত সপ্তাহে কুমিল্লার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাতকে জোড়া লাগিয়ে সফল হওয়ার ঘটনা আছে। সেটিও আমাদের হাত ধরে৷ এবার আমরা সফলভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে পেরেছি। নিশ্চই এটি স্বাস্থ্য সেবায় এক আশার আলো।”
চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি একটি বড় অস্ত্রোপচার। প্রায় সাত ঘণ্টার টানা অস্ত্রোপচারের পর আমরা সফল হয়েছিলাম। রোগীকে আমরা আগেই নিয়েছিলাম, সফলতার নিশ্চয়তা ৫০ শতাংশ। এতে তারা রাজি হয়।
“গত সপ্তাহে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার বাম পায়ের দ্বিতীয় আঙ্গুল এনে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের স্থানে জোড়া লাগানো হয়েছে। এরই মধ্যে নার্ভগুলো সচল হয়েছে। তার হাতের আঙ্গুলের রংও খুব ভালো দেখাচ্ছে। ধীরে ধীরে সেটি শরীরের সঙ্গে মিশে যাবে। তবে তার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।”
কুমিল্লা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাউছার হামিদ বলেন, “কুমিল্লায় এমন নজির আগে দেখা যায়নি। তবে গত সপ্তাহে বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি হাত জোড়া লাগিয়ে আলোচনার জন্ম দেয় ডাক্তার কামরুলের নেতৃত্বে একটি দল। এবার তারা পায়ের আঙ্গুলকে হাতে জোড়া লাগিয়েছে। এবং সেটিতে তারা সফল হয়েছেন। এটি কুমিল্লাসহ সারাদেশের চিকিৎসা সেবায় অনন্য উদাহরণ।”এ বিষয়ে রোগী আশরাফুল আলম বলেন, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। এমনকি সৌদি আরবে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখেছি প্রচুর অর্থ লাগে। কিন্তু কুমিল্লায় আমার এই আঙ্গুল জোড়া লাগাতে পারব ভাবিও নাই।”
তিনি বলেন, “আমার একমাত্র উপার্জনের পথ হল গাড়ি চালানো। কিন্তু হাতের আঙ্গুল না থাকায় আমি তাও করতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত দেশেই চলে আসলাম। সুস্থ হলে আবার গাড়ি চালাতে পারব। কারণ আমি এখন নতুন করে অনুভব করতে পারি আমার বৃদ্ধাঙ্গুল আছে।”
জেলা সিভিল সার্জন আলী নূর মোহাম্মদ বশির আহমদ বলেন, “আমি এমন অস্ত্রোপচারের কথা কুমিল্লাতে পূর্বে শুনিনি। তবে বিচ্ছিন্ন হওয়া অংশকে জোড়া লাগানোর কথা শুনেছি। জেলা শহরে এত জটিল অস্ত্রোপচার চিকিৎসা সেবায় নতুন মাইলফলক হতে পারে। বিদেশের চেয়ে কম পয়সায় মানুষ চিকিৎসা পাবে। সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।”
