১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের প্রথম বৌদ্ধ শিক্ষার্থী রাউজানের নিলয়

অনলাইন ডেস্ক: নিলয় বড়ুয়ার গল্প যেন চলচ্চিত্রের মতো। এক সময় যার স্বপ্ন ছিল শুধু আকাশ ছোঁয়া, আজ সেই আকাশ হতে যাচ্ছে তার কর্মক্ষেত্র। মাত্র ২০ বছরের তরুণ নিলয় বড়ুয়া অর্জন করেছেন বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ। এ বছর একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এবং বাংলাদেশের প্রথম বৌদ্ধ শিক্ষার্থী হিসেবে স্নাতক স্তরে এই স্কলারশিপ পেলেন তিনি। পড়তে যাচ্ছেন হাঙ্গেরির ইউনিভার্সিটি অব নিয়িরেঘাজা-তে বিএসসি ইন এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।
তবে নিলয়ের এ যাত্রা অতটা সহজও ছিল না। ২৫৬ দিনের অপেক্ষা, আটটি আবেদন ও চারটি প্রত্যাখ্যানের পর অবশেষে নিলয়ের হাতে আসে এ প্রাপ্তি। শুধু তাই নয়, আরও তিনটি আন্তর্জাতিক স্কলারশিপও জিতেছেন তিনি। সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার সমমূল্যের সুযোগ, যা কভার করবে টিউশন ফি, আবাসন, চিকিৎসা বিমা ও মাসিক ভাতা।
নিজের স্বপ্নপূরণের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে নিলয় বলেন, ‘হাজারো আবেদনকারীর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে বেছে নিয়েছিল ১০৫ জনকে। আমি ছিলাম ৯০তম। ভেবেছিলাম, আর কোনো সুযোগ নেই। তবু লিখিত পরীক্ষা আর মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ইউনিভার্সিটি অব নিয়িরেঘাজার ভাইভার শেষে প্রফেসর বললেন, নিলয়, ওয়েলকাম টু হাঙ্গেরি। আমার তখনো বিশ্বাস হয়নি, আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে এই যাত্রা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। অনেকেই বাবা-মাকে বলেছিল, অবৈধ পথে বিদেশ পাঠিয়ে দাও, ভবিষ্যৎ নেই, বিদেশ গেলে নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু বাবা-মা বলেছিলেন, তুমি তোমার মতো আগাও। তাদের বিশ্বাসই আমাকে আজকের জায়গায় এনেছে। আমার বিশ্বাস স্বপ্ন দেখার সাহস থাকলে, আর পাশে যদি থাকে বাবা-মায়ের আস্থা তাহলে কোনো সমাজ, কোনো নিয়ম, কোনো বাধাই কাউকে থামাতে পারে না।’
নিলয় ছোটবেলা থেকেই আকাশ আর বিমানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সরকারি স্কুলের ছাত্র হয়েও হাল ছাড়েননি। কলেজে ভর্তি হয়েই যোগ দেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)-এ। দিনে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো ছেলে হয়ে ওঠেন ভোর ৬টায় সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া ক্যাডেট। বিএনসিসিতে অ্যাক্টিং করপোরাল ও কালচারাল ইন্সট্রাক্টর হিসেবে শত শত ক্যাডেটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ছিলেন রেজিমেন্ট কালচারাল সার্জেন্ট। কাজ করেছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে ফার্স্ট এইড অফিসার হিসেবে। জাতীয় পর্যায়ে তবলা প্রতিযোগিতায় হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। আইইএলটিএসে অর্জন করেছেন ৭.৫ স্কোর। তৈরি করেছেন ফিজিক্সট্রি নামের অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ৭০০-এর বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মধ্যম আধারমানিক গ্রামের উমেশ মাস্টার বাড়ির সন্তান নিলয়। ২০১৯ সালে প্রথম এই স্কলারশিপের কথা শোনেন তিনি। জানতেন এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ। কিন্তু তিনি সরকারি স্কুলের ছাত্র। পড়েছেন চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তারপর ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মহসিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। অবশেষে, স্বপ্নপূরণের পথে নিলয়। চট্টগ্রামের সরকারি স্কুল কলেজ থেকে পড়াশোনা করে হাজারো আবেদনকারীর ভিড়ে তিনি হয়েছেন বিজয়ী। জানতে চাইলে নিলয়ের মা লাকি বড়ুয়া বলেন, ‘মা–বাবার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো সন্তানের স্বপ্ন পূরণ হতে দেখা। আজ নিলয় শুধু আমাদের নয়, দেশেরও গর্ব।’

আরও পড়ুন