অনলাইন ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। উপদেষ্টাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করাই এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ছিল ড. ইউনূসের দ্বিতীয়বারের মতো সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যোগদান। গতকাল সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনি ৫ নম্বর গেট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন।এরপর সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়।প্রেস সচিব বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। এর মধ্যে সংস্কার ও বিচারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ জন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্যারিফ কমানোর বিষয়ে বৈঠকের জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টাকে এবং গত এক মাস জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর বিভিন্ন কর্মসূচি সুচারুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বুধবার নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিক পত্র দেওয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হলো। এখন নির্বাচন কমিশন দিন-তারিখ ঠিক করবে। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা তাদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তিনি আরো বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে কিভাবে আরো বেশি করে যুক্ত করা যায়, সেটিও সরকার বিবেচনা করছে।প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে নানা প্রস্তুতি নিয়ে বেশ কিছু সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও গত এক মাসে দুটি সভা করেছেন। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এই সংখ্যা আরো ৫০ হাজার বাড়তে পারে। সেনাবাহিনী এরই মধ্যে ৬০ হাজার সদস্য দেওয়ার কথা জানিয়েছে, তবে প্রয়োজনে এই সংখ্যাও বাড়ানো হতে পারে।নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে দলগুলো স্বাগত জানিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে একটি সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়া। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে, প্রশাসন প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে কারো কোনো অভিযোগ থাকবে না।
প্রেস সচিব জানান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় জীবনবাজি রেখে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে শিক্ষক মেহেরিন চৌধুরী যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তাঁর নামে একটি পুরস্কার চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। তিনি বলেন, গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর নতুন নাম হবে ‘ইউনিভার্সিটি অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ’ ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় দেশে খাদ্য মজুদ ছিল ১৮ লাখ টন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা বেড়ে ২১ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রিজার্ভ বাড়ছে। এসব কারা করছে? আমলাতন্ত্র করেছে। আমলাতন্ত্র ভেঙে পড়লে ছয়টি বন্যা মোকাবেলা করা সম্ভব হতো না।
