আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতার পথে আরও একধাপ এগোল ভারত। দেশের প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ যুদ্ধবিমান তৈরির প্রকল্পকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।গত ২৬ মে অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএমসিএ) প্রোগ্রামের এক্সিকিউশন মডেল অনুমোদন দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এর মধ্য দিয়ে ভারত তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল, বলছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা।স্টিলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন এই ফাইটার জেটটির নকশা তৈরি করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এডিএ)। দেশটির সামরিক পরিকল্পনায় এটি শুধু একটি উচ্চপ্রযুক্তি যুদ্ধবিমান নয়— বরং আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতার দৌড়ে ভারতের একটি কৌশলগত অবস্থান ঘোষণা বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান এয়ার মার্শাল অনিল খোসলা জানান, দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট ২৫ টন ওজনের এই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানটি আকাশে আধিপত্য, শত্রুপক্ষের এলাকায় গভীর আঘাত হানা এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধে ভারতকে নতুন মাত্রা দেবে। তিনি বলেন, এর ‘স্টিলথ শেপিং’, ভেতরে অস্ত্র বহনের ক্ষমতা এবং উন্নত সেন্সর ফিউশন প্রযুক্তি— সব মিলিয়ে এটিকে একটি পরিপূর্ণ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে এই বিমানটি ভারতের বিমানবাহিনীর সক্রিয় বহরে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এতে থাকবে উন্নত এভিওনিক্স, ভারতের তৈরি সক্রিয় ইলেকট্রনিকালি স্ক্যানড অ্যারে (এইএসএ) রাডার এবং সম্ভবত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর মিশন সিস্টেম।
এএমসিএর দুটি সংস্করণ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তৈরি হবে মার্ক-১ সংস্করণ, যেখানে বর্তমান প্রজন্মের প্রযুক্তি ও আমদানি করা ইঞ্জিন ব্যবহৃত হবে। এরপর আসবে মার্ক-২ সংস্করণ, যাতে থাকবে ষষ্ঠ প্রজন্মের উপাদান এবং সম্পূর্ণ ভারতীয়ভাবে তৈরি পাওয়ারপ্ল্যান্ট।
পুরনো যুদ্ধবিমান এসইপিইসিএটি জাগুয়ার এবং মিরাজ ২০০০-এর জায়গা নেবে এই স্টিলথ ফাইটার। পাশাপাশি এটি রাফাল এবং ভবিষ্যতের তেজাস এমকে২-এরও পরিপূরক হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন অনিল খোসলা।
আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দিকে লক্ষ্য রেখেই এমন উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ভারত। বিশেষ করে চীনের জে-২০ এবং জে-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন এবং পাকিস্তানের জে-৩৫ সংগ্রহের পরিকল্পনা, ভারতকে নিজস্ব স্টিলথ ফাইটার নির্মাণে আরও দৃঢ় করেছে। অনিল খোসলা বলেন, এটি শুধু প্রতিরক্ষার প্রশ্ন নয়, বরং কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়। যুদ্ধবিমানটি সফলভাবে নির্মাণ করতে পারলে ভারত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানধারী অভিজাত গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে উঠবে— যা শুধু প্রতিরক্ষার নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় অর্জন হবে।
