২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফেরী থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

অনলাইন ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নরসিংপুর এলাকা থেকে ধলেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় ফেরী থেকে একটি ট্রাকসহ পাঁচ যান নদীতে পড়ে গিয়ে তিনজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকেই ফেরী চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে নদীতে পড়ে যাওয়া যানবাহনগুলোর উদ্ধার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই নদীর দুই পাশে ভারী যানবাহনের অনেক চাপ।সেই সঙ্গে জনসাধারণের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরী বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরীটি মাঝ নদীতে অবস্থানকালে এতে থাকা একটি ট্রাক যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় ফেরীর রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ এসব যান নদীতে পড়ে যায়।
রাত ১০টার দিকে খবর পেয়ে নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে রাত ২টা পর্যন্ত ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলে তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।
আবুল কালাম নামে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘শনিবার রাতের ঘটনায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ডুবে যাওয়া যানাহনগুলো উদ্ধার করা হয়নি।
এই ঘটনায় সকাল থেকেই ফেরী চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে বক্তাবলী এলাকার ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।’
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম জানান, ফেরী চালক কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ নদীর কোথায় যান ডুবেছে তা নিশ্চিত করে শনাক্ত করা জায়গা দেখাতে পারেনি। নদীতে ডুবে যাওয়া স্থান শনাক্ত ও নদীর গভীরতা মেপে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ ফেরী ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আলাল হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে এখনো আমরা এই রুটে ফেরী চলাচল শুরু করতে পারিনি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, আজ বিকালের নাগাদ ফেরী চলাচল শুরু হবে।’
তিনজনের সলিল সমাধি
এই ঘটনায় মোটরসাইকেলচালক রফিক (৩৫), ভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও প্রবাসী মাসুদ রানার (৩০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নিহত প্রবাসী মাসুদ রানার মা পারভিন আক্তার বলেন, ‘গত ২৫ দিন আগে মাসুদ রানা সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসেছে। সে নারায়ণগঞ্জে ড্রাইভিং শিখতে শুরু করেছিল। শনিবার রাত ৯টায় ড্রাইভিং শিখে বাড়ি ফিরছিল। ঘাটে এসে তার স্ত্রীকে ফোন করে বলে আমি ফেরীতে উঠছি, বাসায় চলে আসছি। কিছুক্ষণ পর জানতে পারি ফেরীতে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর মাসুদ রানার মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় নদীর তীরে এসে অপেক্ষা করে রাত ২টায় তার মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।’
নিহত রফিকের স্ত্রী পিংকি বলেন, ‘স্বামীর বাড়ি ফতুল্লার ভোলাইল থেকে আমার বাবার বাড়ি বক্তাবলী মোটরসাইকেলযোগে স্বামী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে যাচ্ছিলাম। ধলেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় ফেরীতে একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেলসহ দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে আমি ফেরীতে পড়ে যাই। তখন ট্রাকটি আমার স্বামীকে নিয়ে পানিতে পড়ে যায়। ওই সময় ফেরীতে থাকা লোকজন রফিককে উদ্ধার করে স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির বলেন, ‘এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাইমা ইসলামকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সাথে তাদের আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাইমা ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, ‘যে ট্রাকচালক এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তিনি ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। আজ স্বচক্ষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং একজন নিহতের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। যেসব যানবাহন নদীতে তলিয়ে গেছে সেগুলো কিভাবে উদ্ধার করা যায় তা নিয়ে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

আরও পড়ুন