১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

টালমাটাল ইস্পাত শিল্প, উৎপাদন খরচ ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে রডের চাহিদা কমে যাওয়ায় ইস্পাত শিল্পে মন্দাভাব বিরাজ করছে। অন্যদিকে কাঁচামাল সংকটে ধুঁকছে ইস্পাত শিল্পকারখানাগুলো। ইস্পাতের কাঁচামাল জোগানদানকারী শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোয়ও চলছে দুর্দিন। প্রয়োজন অনুযায়ী পুরোনো জাহাজ ও কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।এ অবস্থায় ইস্পাত কারখানাগুলো উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী চালাতে পারছে না। তাতে লোকসান গুনছেন ইস্পাত খাতের শিল্প মালিকেরা।
চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত ইস্পাত শিল্পগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস বা বিএসআরএম, আবুল খায়ের স্টিল (একেএস), জিপিএইচ ইস্পাত, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিল (আরএসআরএম), কবির স্টিল রি-রোলিং মিল (কেএসআরএম), এইচএম স্টিল, গোল্ডেন ইস্পাত, শীতলপুল অটো স্টিল মিল (এসএআরএম), বায়েজিদ স্টিল, সীমা স্টিল মিলস, পিএইচপি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল মিল ইত্যাদি। এসব কারখানাই দেশের ইস্পাত খাতের রড উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে থাকে। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে আরএসআরএম, এসএস স্টিল, গোল্ডেন ইস্পাত, ইসলাম স্টিলসহ কয়েকটি ইস্পাত শিল্প।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ শতভাগ আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে পুরোনো জাহাজ কিনে ভাঙার মাধ্যমে ২৫ শতাংশ স্ক্র্যাপের জোগান দেয় শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো। বাকি ৭৫ শতাংশ স্ক্র্যাপ বিদেশ থেকে আমদানি করে ইস্পাত কারখানাগুলো। তাই আমদানিনির্ভর এই ইস্পাত শিল্পের অবস্থা এখন টালমাটাল।
স্ক্র্যাপ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৮০-৮৫টি অটো রি-রোলিং মিল রয়েছে। যেখানে রড উৎপাদন হয়। সেমি আটো মিল রয়েছে শতাধিক। সেমি অটো বা সনাতন পদ্ধতিতে রড তৈরির কারখানাগুলোর অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। স্ক্র্যাপ আমদানিতে বর্তমানে এলসি খোলার হার কমে গেছে ৭০ শতাংশ। স্ক্র্যাপ আমদানি কমে গেছে ৫০ শতাংশ।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারের অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন শিল্পেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। ফলে নির্মাণকাজের অন্যতম উপকরণ রডের চাহিদা কমে যায়। এতে উৎপাদনে নামে ধস। এ পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে নতুন করে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
ইস্পাত শিল্পে লোকসান গুনছেন শিল্প মালিকেরা এমনটি উল্লেখ করে এইচএম স্টিল ও গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ সরোয়ার আলম বলেন, বর্তমানে ইস্পাত শিল্পগুলো সক্ষমতার তুলনায় ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ উৎপাদন করছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও কমে গেছে রডের দাম। গত এক মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রামে টনপ্রতি রডের দাম কমেছে সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা। তাতে বর্তমানে প্রতিটন রড বিক্রি হচ্ছে ৭৯ হাজার থেকে ৮৪ হাজার টাকায়।
ইস্পাত শিল্প মালিকরা জানান, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইস্পাত শিল্প বর্তমানে এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক শিল্প মালিক লোকসান গুনছেন। এর প্রধান কারণ হলো- চাহিদা হ্রাস, রড উৎপাদন খরচ ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, যা সামগ্রিকভাবে ইস্পাত শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কয়েকটি কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর কাজের ধীরগতি।
ইস্পাত শিল্প মালিকেরা আরও জানান, দেশের চলমান মোট উন্নয়ন কাজের ৬০ শতাংশ হয় সরকারি, বেসরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের। অবশিষ্ট কাজ হয় ভোক্তা পর্যায়ে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারের মেগা, মাঝারি ও ছোট আকারের প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। একই সমস্যায় পড়ে বেসরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজও। এমনকি থমকে যায় ভোক্তা পর্যায়ের উন্নয়ন কাজ। তাতে স্থবিরতা নেমে আসে ইস্পাত শিল্পে। এ অবস্থায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কিছু কিছু উন্নয়ন কাজ শুরু হলেও ইস্পাত শিল্পে গতি আনতে পারেনি। উল্টো দিনে দিনে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ইস্পাত শিল্পগুলো সক্ষমতার তুলনায় ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ উৎপাদন করছে। তাতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও উল্টো কমে গেছে রডের দাম। এর মধ্যে নতুন করে কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে টনপ্রতি আরও ৯০০ টাকা। এটি আগের ভ্যাট ও ট্যাক্সের ৪ হাজার ২০০ টাকার সাথে যুক্ত হওয়ায় বিপাকে পড়ে যান ইস্পাত শিল্প মালিকেরা।

 

আরও পড়ুন