১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

খালেদা জিয়ার জন্মদিন আজ 

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৫ সালের আজকের এই দিনে তিনি দিনাজপুর জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ও মাতা তৈয়বা মজুমদার দম্পতির তৃতীয় সন্তান বেগম জিয়া। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।স্বৈরাচার হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। আর এরপর তার মাধ্যমেই বাংলাদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয়।বেগম জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপির উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয় অথবা বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।তবে জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ছাড়া কেক কাটা বা অন্য কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। দলের সব নেতাকর্মীদের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “১৫ আগস্ট ‘গণতন্ত্রের মা’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন। এই দিন উপলক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় এবং একই সঙ্গে ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী শহীদগণ, ‘৯০ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও ‘২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করা হবে।ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এদিন সকাল ১১টায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।”
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুর জেলায় বাবার কর্মস্থলে। তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান ১৯৬০ সালে খালেদা জিয়াকে বিয়ে করেন।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া দম্পতির দুই সন্তান। একজন বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর। ২য় সন্তান প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট। ১৯৮১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পর, বেগম জিয়া ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি সাধারণ সদস্য হিসাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলটি তাঁকে চেয়ারপারসন নির্বাচিত করেন।
বিএনপির হাল ধরার পর ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী আন্দোলন করেন। এই দীর্ঘ আন্দোলনে কখনই তিনি এরশাদের সঙ্গে আপোষ করেননি। কিন্তু বর্তমানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের সঙ্গে আপোষ করে ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের করেন। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্বাচনের বিরোধিতা করেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। ওই সময় জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মতো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা পার্টির নেতৃত্বাধীন শাসনের অধীনে নির্বাচনে যোগ দিয়েছিল। ফলে এরশাদ সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হয়। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার খালেদা জিয়াকে আটক করা হয়েছিল। এর পরও বেগম খালেদা জিয়া দলকে সংগঠিত করে আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৮০ দশকে এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কঠোর বিরোধিতা এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভূমিকা রাখার কারণে তিনি ‘আপোষহীন নেত্রী’ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেগম জিয়া। তার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিণত হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদে কিছু বড় অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। কর্মসংস্থানের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এই সময় এবং শুধু তৈরি পোশাক শিল্প খাতেই পাঁচ বছরে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি ছিল ২৯ শতাংশ। প্রায় দুই লাখ নারী এই সময় তৈরি পোশাক শিল্প খাতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে বিএনপির জয়ের পর খালেদা জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত করা ও পুনরায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতির কারণে, তিনি এক মাসের মধ্যে পদত্যাগ করেন। এরপর একই বছরের জুনের মাসের নতুন নির্বাচনে বিএনপি হেরে যায়। কিন্তু ১১৬টি আসন নিয়ে বেগম জিয়ে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সংসদে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৯ বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে চারদলীয় জোট গঠন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। ফোর্বস ম্যাগাজিন নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে তার ভূমিকার জন্য ২০০৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় তাকে ২৯ নম্বরে স্থান দেয়। ২০০৬ সালে, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের তৎকালীন সরকার গ্রেপ্তার করে। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি যে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সেখানেও জয়লাভ করেছিলেন। ২০০৯ সালের পর থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন শুরু করেন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় শেখ হাসিনার সরকার। তাকে রাখা হয় পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে। ফলে বেগম জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০২০ সালে করোনাকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গুলশানে ভাড়া বাসায় এনে বন্দি রাখা হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি সুস্থভাবে হেঁটে কারাগারে গেলেও, বেরিয়ে আসেন অসুস্থ হয়ে হুইল চেয়ারে করে। বেগম খালেদা জিয়া হৃদযন্ত্র, লিভারের সমস্যা, ডায়াবেটিস, চোখ ও হাঁটুর সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এরই মধ্যে করোনা, হার্ট ও লিভারের সমস্যায় বার বার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুপারিশ করলেও শেখ হাসিনার সরকার তাঁকে বিদেশে নিতে দেয়নি। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর, রাষ্ট্রপতি তাঁকে মুক্তি দেন। এরপর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন। এখন তার শারীরক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।

 

আরও পড়ুন