২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এক বছরে বিএসসি’র আয় ৭৯৮.২৮ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা চট্টগ্রামের বোট ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার উক্ত বার্ষিক সাধারণ সভায় নৌপরিবহন সভাপতি ছিলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এছাড়াও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.নূরুন্নাহার চৌধুরীসহ বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এবং শেয়ারহোল্ডারগণ উপস্থিত ছিলেন। ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক সম্মানিত শেয়ারহোল্ডার ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের সামগ্রিক কর্মকান্ডের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদন অনুসারে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বিএসসি’র পরিচালনা আয় ছিল ৫৯০.৯৮ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২০৭.৩০ কোটি টাকা। সর্বমোট আয় হয়েছে প্রায় ৭৯৮.২৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে পরিচালনা ব্যয় ছিল ২৮৯.৯২ কোটি টাকা এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় ছিল ১২৬.৪৫ কোটি অর্থাৎ সর্বমোট ব্যয় হয় ৪১৬.২৭ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কর সমন্বয়ের পর সংস্থার নীট মুনাফা হয়েছে ৩০৬.৫৬ কোটি টাকা। যা বিগত ৫৪ বছরে সর্বোচ্চ। এরপর তিনি গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের সাথে তুলনা করেন এবং বলেন গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বিএসসি’র মোট আয় হয়েছিল ৫৯৬.১৮ কোটি টাকা ও মোট ব্যয় হয়েছিল ৩১১.৫৯ কোটি টাকা এবং কর সমন্বয়ের পর নীট মুনাফা হয়েছিল ২৪৯.৬৯ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বিএসসির নীট আয় বেড়েছে প্রায় ৫৬.৮৭ কোটি টাকা।
বিএসসি পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারগণকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নীট লাভ হতে ২৫% (পঁচিশ) হারে নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ট) প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে মর্মে অবহিত করেন।
প্রতিবেদনে, বিএসসি নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিধায় ২০২৪- ২৫ অর্থ বছরে গত বছরের সমপরিমান লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। বিএসসির লাভের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আরো বেশি লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করা হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী বিএসসির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩,৫৮২.৯২ কোটি টাকা এবং মোট বহি: দেনার পরিমাণ ১,৯৮৩.৭৭ কোটি টাকা।
এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের শোর এষ্টাব্লিশমেন্টে (অফিসে) অনুমোদিত জনবল ১৫২১ জন (কর্মকর্তা ২১৭ জন ও কর্মচারী ১৩০৪ জন)। ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে কর্পোরেশনের শোর এষ্টাব্লিশমেন্টে (অফিসে) কর্মরত কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ৬৮ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা ১৫৭ জন অর্থাৎ সর্বমোট ২২৫ জন। এছাড়া এফ্লোট এষ্টাব্লিশমেন্টে (জাহাজে) কর্মরত অফিসারের সংখ্যা ছিল ৭৩ জন ও নাবিক ৭৪ জন অর্থাৎ সর্বমোট ১৪৭ জন।
উন্নয়ন প্রকল্প ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সুযোগ্য দিক নির্দেশনা ও সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিএসসি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা, এসডিজি এবং ব্লু-ইকোনমির ধারণা বাস্তবায়নসহ বিএসসিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে বিএসসি’র বহরে বাণিজ্যিক জাহাজ সংযোজন ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন প্রকল্প/কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে।
উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে চীন সরকারের ঋণ সহায়তায় গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৬(ছয়)টি নতুন জাহাজ (প্রতিটি প্রায় ৩৯,০০০ ডিডব্লিউটি সম্পন্ন ৩টি নতুন প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও ৩টি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার) ক্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে যার মধ্যে বর্তমানে ০৫টি জাহাজ বিএসসির বহরে আছে। উক্ত জাহাজসমূহ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে নিয়োজিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন কর্তৃক প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ‘০২(দুই)টি প্রতিটি ৫৫,০০০-৬৬,০০০ ডিডব্লিউটি সম্পন্ন বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ অর্জন’ শীর্ষক প্রকল্পটি গত ০৩ জুন ২০২৫ তারিখে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়। উক্ত প্রকল্পের আওতায় জাহাজ অর্জন/ক্রয়ের প্রস্তাব সম্পর্কিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ গত ১৭ আগষ্ট প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক সদয় অনুমোদিত হয়। উক্ত অনুমোদনের আলোকে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএসসি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে জাহাজ সরবরাহ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক ১ম জাহাজটি (এম.ভি. বাংলার প্রগতি) ইতোমধ্যে বিএসসি বরাবর সরবরাহ করা হয়েছে এবং বাণিজ্যে নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া, ২য় জাহাজ এম.ভি. বাংলার নবযাত্রা জানুয়ারি ২০২৬-এ বিএসসি বরাবর সরবরাহ করার সময়সূচী নির্ধারিত রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা সদয় নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন সরকারি অর্থায়নে (ঋণ গ্রহণ) বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসরণ করে ২ (দুই) টি তৈরি ট্যাংকার জাহাজ এবং নিজস্ব অর্থায়নে ১টি তৈরি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে, বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আওতাধীন সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই সম্পন্ন করা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) নৌপরিবহন
মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
দেশে আমদানিতব্য ক্রুড অয়েল বিএসসির নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য ও দেশের জ্বালানী নিরাপত্তার স্বার্থে কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য যেমন: খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, ক্লে এবং বাল্ক কার্গো ইত্যাদি পরিবহনের টহরহঃবৎৎঁঢ়ঃবফ ংঁঢ়ঢ়ষু পযধরহ গড়ে তোলার জন্য নতুন প্রতিটি ১,১৪,০০০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২ (দুই) টি নতুন ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার ও নতুন প্রতিটি ৮১,৫০০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার অর্জনের জন্য গৃহীত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ “জি টু জি ভিত্তিতে ০২টি ক্রুড ওয়েল মাদার ট্যাংকার এবং ০২টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঈযরহধ ঘধঃরড়হধষ গধপযরহবৎু ওগচ ্ ঊঢচ. ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ এর সাথে কমার্শিয়াল/জাহাজ নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য চীন সরকারের সম্মতি পত্র পাওয়া গেছে। সে মোতাবেক হালনাগাদ ডকুমেন্টসহ ঋণ আবেদন ( খড়ধহ অঢ়ঢ়ষরপধঃরড়হ) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চীনা পক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। সর্বোপরি, ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের পর জাহাজ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। কন্টেইনার পরিবহন বাণিজ্যে বৈশ্বিক ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় বিএসসির লাভজনক ও সফল অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে নতুন ১২(বার)টি সেলুলার কন্টেইনার জাহাজ (প্রতিটি ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ ঞঊটঝ) অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তারমধ্যে অংরধহ ওহভৎধংঃৎঁপঃঁৎব ওহাবংঃসবহঃ ইধহশ (অওওই) এর সহযোগিতায় ০৬টি কন্টেইনার জাহাজ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন